Description
শায়লা বেগম আবার জায়নামাজে ফিরে গেলেন। তারপর মোনাজাত ধরলেন। নদী চোখ মেলে তাকালো। অন্ধকারেও সাদা শাড়ি পরা প্রার্থনারত মায়ের অবয়বটা দেখতে পেলো সে। শায়লা বেগম মোনাজাতে কাঁদছেন। সেই কান্নায় স্বামী-সন্তানের জন্য কী করুণ আকুতি ঝরে পড়ছে স্রষ্টার কাছে। কী আকুল হয়ে কেঁদে যাচ্ছেন তিনি। নদীর বুকের ভেতরটা অদ্ভুত এক প্রশান্তিতে পরিপূর্ণ হয়ে উঠলো।
শায়লা বেগম মোনাজাত শেষ করে উঠে দাঁড়ালেন। তারপর ঢুকে গেলেন নীতুর ঘরে। বিষয়টা প্রথম বুঝতে পারলো না নদী। সেও পা টিপে টিপে নীতুর ঘরের দরজার সামনে এসে দাঁড়ালো। শায়লা বেগম বেশ কিছুক্ষণ নীতুর মাথার কাছে চুপচাপ বসে রইলেন। তারপর একইভাবে দোয়া পড়ে ফুঁ দিতে লাগলেন তার ঘুমন্ত চোখে- মুখে। নিচু হয়ে আলতো করে চুমুও খেলেন।
ঘুমে অচেতন নীতু কি তা টের পেলো? সে কি জানলো, এই পৃথিবীর অসংখ্য নিদ্রিত মানুষের মাঝে একজন মাত্র মানুষ তার জন্য বিনিদ্র রাত কাটায়? প্রার্থনায় সমর্পণ করে নিজেকে। কেবল তার জন্য?
নদীর হঠাৎ মনে হলো, তাতে শায়লা বেগমের কিছু যায় আসে না। এই ভালোবাসা প্রকাশ্যে বা অগোচরে, নিভৃতে বা সরবে একই রকম। কিংবা প্রকাশ্যের চেয়ে গোপনে আরও বেশি সোচ্চার। আরও বেশি তীব্র। সজলের কথাটা হয়তো সত্য নয়। জগতের সব ভালোবাসাই প্রাপ্তির কথা ভাবে না।
এই একটি মাত্র ভালোবাসা, এই একটিমাত্র অুনভব যা নিঃশর্ত ও নিঃস্বার্থ।
এই গভীর রাতের অন্ধকারে, এই নীরব-নিভৃত ঘরের কোণে, সকলের অগোচরে শুভ্র বসনা ওই নারীর যে স্পর্শ, যে প্রার্থনা তা জগতের আর কিছুর সাথেই তুল্য নয়।
Reviews
There are no reviews yet.